বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে তালমিলিয়ে বাড়ছে, পুরুষদের স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকির প্রবনতা।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দশ বছরে গড় তাপমাত্রার নিরব বৃদ্ধি, পাশাপাশি অতিবেগুনি (UV) রশ্মির মাত্রার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি এটি শুধুমাত্র ত্বকের সৌন্দর্য নয়, বরং গভীর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এসেছে। পরিবার, বিভিন্ন সংস্থা ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে এখন এই বিষয় নিয়ে যারা। কিন্তু এখনও অনেকেই বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আজকে বদলে যাওয়া পরিবেশ এবং আরসেনিক মিশ্রিত পানির সমস্যার কারণে স্বাভাবিকভাবে পুরুষরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে।
UV Radiation বাড়ছে ও কেনই বা বেশি ক্ষতিকর?
গত দশ বছরে বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ৫–৮%, আর তালে সঙ্গে সাথে UV রশ্মির মাত্রাও বেড়েছে গরম, ঝরনা, ঝড়, নদী ভাঙ্গন, প্লাবন—এই সমস্ত কালবৈশাখী, বন্যা ও আকস্মিক ওষুধ পরিবেশের কারণে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । UV রশ্মি উচ্চ মাত্রায় ত্বকে প্রবেশ করে DNA-তে ক্ষতি করে। যেসব পুরুষ বাইরে কাজ করেন, মাঠে, রাস্তায়, নির্মাণক্ষেত্রে তারা প্রায়ই দীর্ঘ সময় রোদে থাকেন। অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না, কারণ মনে হয় এটা নারীদের জন্য। ফলে ত্বক Sunburn, Sun spots, wrinkles সামনাসামনি হয়ে পড়ে, এবং সবচেয়ে বাজে হলো স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরসেনিক যোগ করছে বাংলাদেশে এক মহামারী
বাংলাদেশে প্রায় ৭০–৭৮ মিলিয়ন মানুষ আর্সেনিক-দূষিত পানির সংস্পর্শে, যাদের থেকে আগামী কয়েক বছরেই লক্ষাধিক মৃত্যুর ঝুঁকি বলা হচ্ছে । টিউবলওয়েল থেকে পানীয় হিসাবে এই পানি কিনতে গেলে ত্বক-দাগ থেকে শুরু করে বেসাল বা স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমাসহ মারাত্মক স্কিন ক্যান্সার উন্নতি করতে শুরু করে ।
জাতীয় একটি ১২ বছরের হাসপাতালে (BSMMU, ২০০৪–২০১৫) স্কিন ক্যান্সার রোগীদের প্রায় ৫২.৮% পুরুষ ছিলেন (pubmed.ncbi.nlm.nih.gov)। এছাড়া, চট্টগ্রামে একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে যা, 2.6% আর্সেনিকজনিত স্কিন ক্যান্সার রোগী ছিল আবার পুরুষেরাই প্রায় ৭০% ।
পুরুষ কেন বেশি ঝুঁকিতে?
১. ত্বকের গঠনগত পার্থক্য
পুরুষদের ত্বক নারীদের চেয়ে প্রায় ২০–২৫% বেশি মোটা, এবং তৈলাক্ত হলেও শুষ্ক হওয়ার প্রবণতা থাকে না। এর ফলে UV-রশ্মি ত্বকের গহীনে প্রবেশ করে সরাসরি DNA ক্ষতি করতে পারে ।
২. জীবনযাত্রার বাস্তবতা
অফিস, নির্মাণক্ষেত্র, মাঠ বা রাস্তায় কাজ করা, সারা দিন রোদে থাকা — প্রচণ্ড UV এক্সপোজারের মুখে ফেলতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ এখনও সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না (reddit.com)।
৩. স্বাস্থ্যে উদাসীনতা
বালাই-বাদে ‘দাঁত থাকলে ঠোঁট দেখাব’, তেমনি ত্বকের সমস্যায় ‘দাগ-চিহ্ন হলেও সমস্যা নয়’ — এমন মানসিকতা থেকে স্কিন ক্যান্সার যেমন চোখে পড়ার সময় না করে, ফলে অনেক সময় আগেই উন্নতি করে ফেলে বা দূরে সরিয়ে দেয়।
৪. আরসেনিক ও UV এককেও জোড়ে কাজ
আগ্রাসী রাসায়নিক আরসেনিক ও UV একত্রে স্কিন লেশিয়ন ও স্কিন ক্যান্সার তৈরি করে, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে বেশি কার্যকরী ।
প্রাথমিক লক্ষণ ও সতর্ক সংকেত
Hyperpigmentation/Melanosis: রেইন্ড্রপ’র দাগ (Raindrop pigmentation) (journals.lww.com)।
Hyperkeratosis: তালু ও পায়ে স্তরের ক্ষত বা নোডিউল ফর্মেশন (journals.lww.com)।
চুলকানি, দাগ, স্থায়ী কালো দাগ:যারা দেখে এগুলোকে গুরুত্ব না দেয়, পরে এসে করোনার মতো বড় ঝামেলায় পড়তে পারে।
লাল বা কালো কালচে দাগ বা পরিবর্তনশীল ছাপ,এগুলো মেলানোমাসহ স্কিন ক্যান্সারের পূর্বাভাস।
সচেতনতা ও প্রতিরোধ: আপনি কি করছেন?
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
SPF 30+ বা ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন প্রতিদিন লাগাতে হবে, রিফ্রেশ করে নিতে হবে দুই ঘণ্টায়। UV প্রতিরোধের পাশাপাশি ওজোন ছোঁয়া ধুলো থেকে ত্বক রক্ষা করে ।
ছায়াতলে থাকুন ও পোশাক দিয়ে বাঁচুন
নামিব তাপমাত্রায় সানস্ক্রিনের সঙ্গে হালকা লং-স্লিভস, ক্যাপ/ছাতা দিয়ে রক্ষা করুন ।
পানি নিশ্চিত করুন
দিনে কমপক্ষে ৩–৪ লিটার পানিতে নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন-এতে ত্বকের পুনর্জীবন ও মলের দ্রুত সরে যাওয়া সহজ হয়।
আরসেনিক মুক্ত পানি কিনুন
টিউবলওয়েলের পানিতে যদি >১০ µg/L আর্সেনিক থাকে, তবে তা সরাসরি বিপজ্জনক। সেদিনের জন্য যেসব পানি ভরসাযোগ্য, সেগুলো ব্যবহারে জোর দিন (onlinelibrary.wiley.com)।
নিয়মিত স্ক্রিন ও ফলো-আপ
ত্বকের কোনো স্থায়ী দাগ, নোডিউল, র্যাশ বা দাগ দেখে ≥৬ মাস না কাটিয়ে ডার্মাটোলজিস্ট দেখানো জরুরি। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হলে সুফল পাওয়া যায়।
মানসিক সচেতনতা ও শিক্ষা
পুরুষদের মনোভাব বদল
“ত্বকের যত্ন মাত্র নারীদের বিষয়” ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বুঝতে হবে, এটি নিজেকে সম্মান করার সহায়ক।স্বাস্থ্য সচেতনা সম্প্রসারণ
শিক্ষা, কনসেল্টিং ও পরিবার-পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া চাই।সরকার ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
ছোট ছোট হেল্থ ক্যাম্প, স্কিন চেক-আপ ফ্রি ক্যাম্প, UV দূষণ ও আরসেনিক বিষয়ে সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন।
অবশেষে:
পুরুষদের ত্বক স্বাভাবিকভাবে ছেলেমোটা, তৈলাক্ত ও UV-রশ্মিতে সংবেদনশীল। এরপরেও নিজেদের মধ্যে সচেতনা রাখা প্রয়োজন। কারণ, UV রশ্মি + আরসেনিক এক দলে একটি ভয়ানক জোড়া বানিয়েছে, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করছে। প্রতিদিন সানস্ক্রিন, ছায়া, আরসেনিক মুক্ত পানি, এই তিনটি নিয়ম না মেনে অপরাধ রয়েছে, তবে মেনে চললে নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করা যায়। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই নিজের প্রতি সম্মান দেখানো।
Climate-induced arsenic & cancer risk in Bangladesh (theguardian.com)
Arsenic exposure & skin lesion prevalence (ehp.niehs.nih.gov)
Reddit user advice on sunscreen (reddit.com)